মাজহারুল ইসলাম / ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ /  “চোরের মার বড় গলা” বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদটি যেন ভূমিদস্যু আল মোস্তফার ক্ষেত্রে যথাযথ। এমনটাই মনে করেন নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা শিল্পনগরী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পিরোজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসসূত্রে জানা গেছে, আল মোস্তফার মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠান ও নিজ নামে চর রমজান সোনাউল্লাহ মৌজায় তার দখলে রয়েছে ১০ একরের বেশি জমি।
 > সূত্রটি দাবী করে, মেঘনা শিল্পাঞ্চল এলাকায় চর রমজান সোনাউল্লাহ মৌজায় মোস্তফা কামাল ওরফে আল মোস্তফা ওরফে জামাই মোস্তফার মালিকানাধীন আল মোস্তফা ভেজিটেবল অয়েল মিলস লিঃ-এর নামে বিভিন্ন দাগে মোট জমি রয়েছে ৫৫ শতাংশ ৪০ অযুতাংশ। আল মোস্তফা অটো ফ্লাওয়ার ও ডাল মিল আষাঢ়িয়ার চরের ঠিকানায় একাধিক দাগে রয়েছে মোট ১ একর ১২ শতাংশ ১৯ অযুতাংশ জমি। আল মোস্তফা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ইন্ডাষ্ট্রিজ-এর নামে রয়েছে বিভিন্ন দাগে মোট জমির পরিমান ৩ একর ৬৬ শতাংশ ৩১ অযুতাংশ। তারই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হ্যারিটেজ পলিমার এন্ড ল্যান্ডটিউবস্ লিঃ-এর নামে বিভিন্ন দাগে মোট জমি রয়েছে ৫৪ শতাংশ ৩৪ অযুতাংশ আর নিজ নামে মোট ১৪ শতাংশ ২৫ অযুতাংশ জমি। সব মিলিয়ে আল মোস্তফার নিজ নামে ও তার মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে মোট জমির পরিমান ৬ একর ২ শাতংশ।
 > এদিকে আল মোস্তফা শুধু চর রমজান সোনাউল্লাহ মৌজায় ১০ একরের বেশি জমি তার অবৈধ দখলে রেখেছেন। অবৈধ দখল করা জমির মধ্যে সরকারী খাস জমি, ভূমিহীনদের জন্য সরকারের বরাদ্ধ দেয়া ভূমিহীনদের জমি ও নদী আর খাল।
 > স্থানীয়রা জানায়, মালিকানাধীন জমি ক্রয়ের সময় আল মোস্তফা জমির মালিকদের সাথে সরাসরি কথা বলে ক্রয় করলেও সরকারী খাস জমি, ভূমিহীনদের জন্য সরকারের বরাদ্ধ দেয়া ভূমিহীনদের জমি ও নদী আর খাল দখলের সময় ব্যবহার করেছেন স্থানীয় ইউনিয়নের সদস্য ও সরকার দলীয় নামধারী রাজনৈতিক হোমড়া চোমরাদের। তারা আরও জানায়, মালিকানাধীন জমি ক্রয় ও দখলে কোন সমস্যা না হলেও অবৈধ জমি দখলে নিতে গিয়ে আল মোস্তফা এলাকার নিরীহ বাসিন্দাদের উপর চালিয়ে যাচ্ছে নির্যাতনের স্টিম রোলার। অনেক এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে করেছেন চাঁদাবজির মিথ্যে মামলা। জেলের ঘানি টানিয়েছেন অনেক ভূমিহীনকে। সেই নির্যাতনের অন্তসার শূন্য হচ্ছে এলাকার খেঁটে খাওয়া মানুষগুলো। হারাচ্ছে যুগ যুগ ধরে বসবাস করা মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকুও। তারা যেন অন্ধ আর বধির। তাই তাদের নীরব আচরণেও প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, প্রশাসনের এমন আচরণ অব্যহত থাকলে বর্তমান পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে।
 > এ বিষয়ে অভিযুক্ত আল মোস্তফা জানান, আমি কোন ভূমিহীনদের জমি, খাস জমি বা খাল দখল করিনি। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আইনত সিদ্ধান্ত যা হয়, তা আমি মেনে নেব।
 > সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রুবায়েত হায়াত শিপলুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আল মোস্তফা গ্রুপ যদি কোন সরকারী খাস জমি দখল করে প্রতিষ্ঠান নির্মান করে তাহলে সরকারী জমি রক্ষার্থে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 > নারায়নগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম জানান, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না বা লিখিত কোন অভিযোগ আছে কিনা জানা নেই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব। তাছাড়া সরকারের সম্পত্তি কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যে ইচ্ছা করলেই দখল করে নিতে পারবে।
 > এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার সকালে ভূমিহীনদের ও সরকারী খাঁস জমি দখল করার অভিযোগে আল মোস্তফা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং এর গেইট ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অংগ-সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে পিরোজপুর আওয়ামী লীগের নামধারী নেতাদের অবৈধ দখলকৃত সরকারী খাস জমি ছেড়ে দিয়ে নির্দেশ দিতে ও দখলকৃত জমিতে লাল নিশান ও সাইবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূবায়েত হায়াত শিপলুর নির্দেশে একটি প্রতিনিধি দল দিনব্যাপী ইসলামপুর এলাকার খাস জমি জরিপ করে দখলে নেন এবং সরকারী খাঁস জমির চারপাশে লাল নিশানা ও একটি সাইবোর্ড টানিয়ে দেন। এসময় তারা আল মোস্তফার দখলকৃত সম্পত্তির বাইরের অংশ যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য ঐসব জায়গায় তারা লাল নিশানা টাঙিয়ে দেন।
 > সরকারী খাস জমিতে লাল নিশানা ও সাইনবোর্ড লাগানোর ব্যাপারে উপজেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূবায়েত হায়াত শিপলু জানান, আমার নির্দেশেই আমার সার্ভেয়ার মশিউর রহমান ও পিরোজপুর ভূমি অফিসের নায়েব আ. কাদের ইসলামপুরে ভূমিহীনদের খাস জমি পরিদর্শন করেছে। দিনব্যাপী তারা ঐসব এলাকায় জরিপ করে দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া খাস জমির চারদিকে লাল নিশানা ও একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে।

Post a Comment

Disqus