নাছিমা আক্তার
মোঃ শাহ জালাল মিয়া / ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ /  উচ্চ আদালত ও মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার অবৈধ ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান উল্লেখ করেছেন, তিনি জনগণের ভোটে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব ড. জুলিয়া মঈন কর্তৃক স্বাক্ষরিত (স্মারক নং- ৪৬.০৪৫.০২৭.০৮.৪২.০৪২.২০১৫-৩২৭) এক প্রজ্ঞাপনে আমাকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হইতে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেন। উক্ত নির্দেশের পর আমি গত ৩ মে পিটিশন নং- ৩৯৪৫/১৬ করার পর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসাইন এবং বিচারপতি একে এম শহিদুল হকের দ্বৈত বেঞ্চ আমার উক্ত রীট পিটিশন শুনানী অন্তে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন পরবর্তী ৩ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে উক্ত রীট আদেশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ পুনরায় ১৫ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব লুৎফুন নাহার কর্তৃক স্বাক্ষরিত (স্মারক নং- ৪৬.০৪৫.০২৭.০৮.৪২.০৪২.২০১৫-৭৮১) মূলে আমাকে চেয়ারম্যান পদে পুণঃবহালের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে পত্র প্রেরণ করেন। উক্ত পত্রের পরিপেক্ষিতে ১৬ জুন মোঃ ইসরাত হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) স্থানীয় সরকার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে দায়িত্ব ভার প্রদানের জন্য পত্র প্রদান করেন। উক্ত পত্র পাওয়ার পর সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব ভার প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তখন আমার নানাবিধ সমস্যার কারণে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
বর্তমানে আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত ও সক্ষম। লিখিত অভিযোগে তিনি আরোও উল্লেখ করেন ৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২ ঘটিকায় সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় আমি নির্দিষ্ট সময়ে উপজেলা পরিষদে হাজির হই। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান শাহ আলম রূপন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের ভূঁঞা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকার পরও নির্দিষ্ট সময়ে রহস্যজনক কারণে সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান অফিস ও চেয়ার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার পেশি শক্তির বলে আমার অফিস ও চেয়ার দখল করে  বসে থাকেন। আমি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে এমপি মহোদয় ও ইউএনও’র সঙ্গে তার কক্ষে অবস্থান করে বিকাল ৩ ঘটিকায় পিরোজপুর ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওনা হইয়া চলিয়া যাই। আমি বিশ^স্ত সূত্রে জানিতে পারিলাম যে, আমি চলে যাওয়ার পর বিকাল ৫ ঘটিকার সময় ৫ মিনিটের জন্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তারের সভাপতিত্বে তরিগড়ি করে সভার কাজ শুরু ও সমাপ্ত করেন।
সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার মহামান্য হাইকোট ও মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে বে-আইনীভাবে   দখলদারের মতো উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন এবং তিনি অবৈধ ভাবে চেয়ারম্যানের অফিস কার্যালয়, পরিষদের গাড়ি পেশি শক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করে আসছেন। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার জানান, আমি মন্ত্রনালয়ের চিঠি পেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করব।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের ভূঁঞা দৈনিক খবর প্রতিদিনকে জানান, মহামান্য হাইকোর্ট ও মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী যিনি বৈধ তাকেই দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হবে।

        

Post a Comment

Disqus